|

চুয়েট: ২০২৫ সালের সেরা প্রযুক্তি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত গাইড

cuet

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রকৌশল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে রাউজান উপজেলায় সবুজ পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রযুক্তিগত শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠা:

চুয়েটের যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৮ সালে ‘চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’ নামে। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে এটি ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (বিআইটি), চট্টগ্রাম’ হিসেবে পরিচিতি পায়। অবশেষে ২০০৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর এটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়ে ‘চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)’ নাম ধারণ করে।

ক্যাম্পাস ও অবকাঠামো:

১৬৯ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত চুয়েট ক্যাম্পাসে রয়েছে আধুনিক শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব সুবিধা। এখানে রয়েছে বিভিন্ন একাডেমিক ভবন, গবেষণাগার, লাইব্রেরি, আবাসিক হল, মিলনায়তন, মসজিদ, মেডিকেল সেন্টার এবং ক্রীড়া সুবিধা। ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করে।

একাডেমিক বিভাগ ও অনুষদ:

চুয়েটে বর্তমানে ৫টি অনুষদের অধীনে ১৩টি বিভাগ রয়েছে। প্রধান অনুষদগুলো হলো:

  • তড়িৎ ও কম্পিউটার প্রকৌশল অনুষদ: তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকমিউনিকেশন প্রকৌশল বিভাগ নিয়ে গঠিত।
  • পুরকৌশল অনুষদ: পুরকৌশল, পানি সম্পদ কৌশল, দুর্যোগ ও পরিবেশ কৌশল বিভাগ অন্তর্ভুক্ত।
  • যন্ত্র প্রকৌশল অনুষদ: যন্ত্র প্রকৌশল, পেট্রোলিয়াম ও মাইনিং প্রকৌশল, মেকাট্রনিক্স ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রকৌশল বিভাগ নিয়ে গঠিত।
  • স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদ: স্থাপত্য এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ অন্তর্ভুক্ত।
  • বিজ্ঞান ও মানবিক অনুষদ: গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এবং মানবিক বিভাগ নিয়ে গঠিত।

ভর্তি প্রক্রিয়া:

চুয়েটে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির জন্য প্রতি বছর প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও ইংরেজিতে নির্দিষ্ট গ্রেড পয়েন্ট অর্জনকারী শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারেন। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মেধাক্রম অনুসারে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি করা হয়।

শিক্ষা ও গবেষণা:

চুয়েটের শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি। এখানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রকৌশল, স্থাপত্য, নগর পরিকল্পনা ও বিজ্ঞান বিষয়ে পাঠদান করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি গবেষণার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে, যা দেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে সহায়ক।

ক্যাম্পাস জীবন:

চুয়েটের ক্যাম্পাস জীবন শিক্ষার্থীদের জন্য সমৃদ্ধ ও প্রাণবন্ত। এখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া ও সামাজিক সংগঠন রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত উন্নয়নে সহায়তা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিতভাবে সেমিনার, কর্মশালা ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, যা শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।

উল্লেখযোগ্য অর্জন:

চুয়েটের শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। ২০২৩ সালে চুয়েটের শিক্ষার্থীরা নরওয়ের অ্যাগডার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কেয়ার প্রকল্পের আওতায় উচ্চশিক্ষার জন্য নির্বাচিত হন। এছাড়া, ৪১তম বিসিএসে চুয়েটের ৬১ জন প্রাক্তন শিক্ষার্থী বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন।

Prothom Alo

উপসংহার:

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) দেশের প্রযুক্তিগত শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এর আধুনিক অবকাঠামো, মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম, এবং সমৃদ্ধ ক্যাম্পাস জীবন শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আদর্শ পরিবেশ সৃষ্টি করে। প্রযুক্তিগত শিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য চুয়েট হতে পারে একটি উৎকৃষ্ট পছন্দ।

Similar Posts